। মানবজমিন ।
www.mzamin.com-logo
বেলায়েত হোসাইন |
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার

বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম
মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি সরকারের অপকর্মের দোসর হিসেবে কাজ করছে। মন্ত্রিত্ব দিয়ে বিরোধী দলকে আইনি শিকল পরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে বিরোধী দল বাস্তবে সরকারের হয়েই কাজ করছে। মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টিকে দাপ্তরিক অর্থে ছাড়া আর কোনভাবেই বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা যায় না। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা যে, সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে না। সেখানে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তারা জাতীয় পার্টিকে দেখতে চায়। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দলকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে সরকারের সমর্থক বা সরকারের অঙ্গ সংগঠন হিসেবেই জনগণের চোখে ধরা পড়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদে একটি দলকে যেকোন এক পক্ষে থাকতে হবে। তার ভাগ হয়ে বিপক্ষে থাকার কোন অবকাশ নেই। ফলে বাস্তবে তারা সংসদে সরকার পক্ষ হয়েই কাজ করছেন। অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবে কোন নিয়মকানুন অনুসরণ না করে কমিটি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের নানানভাবে বাদ ও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের মত হলো- জাতীয় পার্টি সরকারের অপকর্মের দোসর।
৫ই জানুয়ারির নিজের নির্বাচন বর্জন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো। নিজের জন্য ভুল কি সঠিক, সে হিসাব করে তো রাজনীতি করা যায় না। তাছাড়া, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে যেসব যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি পরবর্তীকালে অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন প্রথমে বলা হয়েছে- তাড়াহুড়া বা একটা সময়সীমার ভেতরেই নির্বাচন করতে হবে। এই কথাটি সত্য নয় এই জন্য যে, ২৫শে জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ চালু থাকার বিধান ছিলো। এরপর আরও ৩ মাস নির্বাচনকালীন সরকার থাকার সুযোগ ছিলো। সরকার চাইলে আরও সময় নিতো পারতো। বলা হয়েছিলো- ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন না হলে অনেক রক্তপাত ঘটতো। কিন্তু অনেক রক্তপাত হয়েছে। নির্বাচনের জের হিসেবে এখনও রক্তপাত হচ্ছে। তাহলে লাভ কি হলো? দ্বিতীয়ত, যে কথাটি বলা হয়েছিল এই নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ ও বেশির ভাগ দলের মতামত উপেক্ষা করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যে সঠিক পথ নয়- তা ইতিপূর্বে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো- আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি মিলে সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান আমরাই নিয়েছিলাম। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। তাই এটিও সত্য নয়। তৃতীয় কথা বলা হয়েছিলো- গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বহাল রাখার জন্য। এটাও অসত্য। কারণ, সবার মতানৈক্যের ভিত্তিতে যেকোন পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন হতে পারতো। আর সেটাই গণতন্ত্র। বরং ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে সংবিধানের কিছু সংশোধন করে ও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সরব হওয়ার মতো কোন প্ল্যাটফরম বা পরিস্থিতি নেই। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তা আরও বেশি সংকুচিত। সত্য কথা বলতে গেলে পার্টির ফোরাম থেকে একমত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর দেশেও বর্তমানে বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই সময়ে অন্তত আগের মতো রাজনীতিতে সরব হওয়ার কোন পরিস্থিতি দেখছি না।
জাতীয় পার্টির সদস্যরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছেন এমন আলোচনা অনেক দিন থেকে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের নিয়ন্ত্রণ এরশাদ বা রওশন কারো হাতেই নেই। কাজেই এরশাদ সাহেব বা রওশন এরশাদের কথামতো যে, তারা কাজ করবেন- এটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি- জাতীয় পার্টিকে আগের মতোই ব্যবহার করা হবে। এ ধরনের এমপি হবে, মন্ত্রী হবে। তাই জাতীয় পার্টির টিকিটের জন্য বেশ প্রচার প্রচারণাও চলছে। যদি লাইগ্যা যায়…।
বিরোধী জোটের মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেভাবে একনায়কতন্ত্র চালানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি মানুষের আস্থায় আসছে না। মানুষ বিশ্বাস করছে যে, কোন বড় ধরনের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান ছাড়া জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে না।
এই গণঅভ্যুত্থান তখনই সম্ভব হবে যখন সব রাজনৈতিক দল একটি পয়েন্টে আসবে। সেখানে আরেকটি জিনিস খুব গুরত্বপূর্ণ হলো-সাধারণ মানুষ ভাবে, রাজনীতি করে ব্যবসায়ীক উদ্দেশে। ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করার জন্য। মানুষ এ জন্য নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তাদের মতামত- আন্দোলন করে আমরা যাদের আনবো। তারাও তো একই কাজ করবে। এ জন্য তারা সকল মতের ঊর্ধ্বে এসে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বামপন্থিরা যদি বলে আমরা ডানপন্থিদের সঙ্গে মিশবো না। ডানপন্থিরা যদি বলে আমরা বামপন্থিদের সঙ্গে মিশবো না। তাহলে বুঝতে হবে তারা সরকারের স্বার্থে কাজ করছে। ক্ষমতার লোভ বিসর্জন দিতে হবে। যদি এসব মেনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন- তাহলে গণজাগরণের সৃষ্টি হবে। এই গণজাগরণে সরকার মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।