গোলাম মোহাম্মদ কাদের
রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭
বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান। তারা গভীর নিষ্ঠায় ধর্ম পালন করলেও সাম্প্রদায়িক নয়। তাদের অধিকাংশ নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় আদেশ-নির্দেশ, রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করে আন্তরিকভাবে। একই সঙ্গে তারা নাচ, গান, যাত্রা, নাটক, থিয়েটার ইত্যাদি বিষয়েও সমান উৎসাহী। গ্রামের সাধারণ মানুষ একরাতে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে পূর্ণ আবেগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে চোখের জলে বুক ভিজিয়ে দেয়। অন্য রাতে সে মানুষই যাত্রা গানও উপভোগ করে।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সব ধর্মের মানুষ পরস্পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ও সুপ্রতিবেশী হিসেবে একসঙ্গে বসবাস করে। এখানে একই চত্বরে মুসলমানদের মসজিদ ও হিন্দুদের মন্দির সহঅবস্থান করতে দেখা যায়।
মানুষের চাহিদার কারণেই হয়তোবা দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দলের চরিত্রও একই ধরনের। তারা ধর্ম পালনে বিশ্বাসী কিন্তু সাম্প্রদায়িক নয়। বলা যায়, এ ধরনের চরিত্র ধারণ করেছে যেসব রাজনৈতিক দল তারাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থন লাভে সমর্থ হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতার মিশ্রণ বা মাঝামাঝি অবস্থান অধিকাংশ জনসমষ্টির আকাঙ্ক্ষা। তার বাইরের যে কোনো একদিকে থাকাটা নৈতিকতার বা আদর্শের দিক থেকে নির্ভেজাল হলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে সংখ্যালঘু, এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সে ধরনের আদর্শভিত্তিক দলসমূহ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়।
জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে বা ভোটের হিসাবে নিকট অতীত ইতিহাস বা বর্তমান প্রেক্ষিত থেকে মোটামুটি তিনটি জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলকে বিবেচনায় আনা যায়। সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা প্রথম দুটি রাজনৈতিক দলের তুলনায় বেশ নিচে। তবে নিকট অতীতে একসময় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেশি ছিল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমর্থক গোষ্ঠী একই ধরনের হওয়ায় বিএনপির উত্থানে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা মোটামুটি একই হারে হ্রাস পায়। ফলে যে কোনো কারণে বিএনপির অবস্থান দুর্বল হলে তাদের সমর্থক সংখ্যা যতটুকু হ্রাস পাবে জাতীয় পার্টির সমর্থক কাছাকাছি পর্যায়ে বৃদ্ধি হবে ধরে নেওয়া হয়। তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি নিয়ামক শক্তি হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। সে কারণে এ দলটির রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে।
উপরোক্ত তিনটি রাজনৈতিক দলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে দলসমূহের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের ধারণা হলো আওয়ামী লীগ— অসাম্প্রদায়িক, বিএনপি— সাম্প্রদায়িক, জাতীয় পার্টি— কিছুটা হলেও সাম্প্রদায়িক। এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টির প্রধান কারণ এদের মিত্র দলগুলোর দলীয় ও নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক পরিচয়। আওয়ামী লীগ বাম রাজনীতির বা উদারপন্থি দল ও এ ধরনের সংগঠন এবং ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন বা নির্বাচনে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগকে এ ধরনের সংগঠনসমূহের নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যায়। ফলে আওয়ামী লীগ উদারপন্থি ও সে কারণে অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ, এটা ধরে নেওয়া হয়।
একইভাবে বিএনপি ধর্মভিত্তিক ডান রাজনীতির ধারক বা রক্ষণশীল দলগুলোর রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে দৃশ্যমান। সাম্প্রদায়িক দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামে বা জাতীয় নির্বাচনে যে জোট গঠিত হয় তার নেতৃত্বে বিএনপিকে দেখা যায়। ফলে তারা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী দল এটা মনে করাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুতে, প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে)’ এ শব্দসমূহ সংযোজন করা হয়; ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় ফরমান আদেশ নং ওঠ এর বলে এ কাজটি করা হয়েছিল; বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে ও অনুমোদনে। এ বিষয়টিও বিএনপির নেতৃত্বে ইসলামী মৌলবাদী বা সাম্প্রদায়িক চেতনায় অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ বলে ধরে নেওয়া হয়।
জাতীয় পার্টি অতীতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপির স্থলে ধর্মভিত্তিক ডান রাজনীতির ধারক দলগুলোর মিত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীতে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত জোটে যোগ দিয়েছিল। তাদের অনেক কর্মকাণ্ডে ধর্মনিরপেক্ষতার ছাপ পাওয়া যায়। তবে জাতীয় পার্টির শাসনামলে সংবিধান সংশোধন করে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংযোজন করা হয়। এ কারণে জাতীয় পার্টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ উদারপন্থি দলগুলোর চোখে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।
এখন বাস্তবতায় আসা যাক। জাতীয় পার্টি সংবিধান (অষ্টম সংশোধনী) আইন, ১৯৮৮ (১৯৮৮ সালের ৩০নং আইন)-এর ২ ধারা বলে ২ক অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে। ধারাটি নিম্নরূপ : ‘২ক। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে। ’
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকারে প্রধান শরিক হিসেবে (সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে সংবিধানের অনেক সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন সাধন করে। এখানে উল্লেখ্য, সে সময় যদিও জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়েছিল, আওয়ামী লীগ এককভাবে জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। ফলে শরিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়াই আওয়ামী লীগ সংবিধানে সংশোধনী আনার ও সংসদে সেগুলো অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার শক্তি অর্জন করেছিল।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সার্বক্ষণিক মিত্র বামপন্থি দলসমূহের চাপ ছিল। এ দাবি তারা করে আসছিল সংবিধানে এটা সংযোজনের দিন থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ধারাটি বাদ দেয়নি। তারা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সালের ১৪নং আইন)-এর ৪ ধারা বলে, ২। ক ধারাটি সংশোধিত আকারে প্রতিস্থাপিত করে। প্রতিস্থাপিত ধারাটি নিম্নরূপ- ‘২ক। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। ’
জাতীয় পার্টির ‘ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম’ সংযোজন করায় যদি সাম্প্রদায়িক হয়, তবে আওয়ামী লীগ সামান্য ভিন্নরূপে এর পুনঃপ্রবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গণ্য হয় কীভাবে? আর যদি এরপরও আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক দল বলা যায় তাহলে জাতীয় পার্টিকে কেন ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক বলা যাবে না?
এখন আসা যাক, সংবিধানে সংযোজন/বিয়োজন ও সে প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক ধরে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তুলনামূলক অবস্থান বিশ্লেষণে। আগেই বলা হয়েছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা সংবিধান সংশোধন করে এর শুরুতে, প্রস্তাবনারও আগে, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে)’ শব্দসমূহ যুক্ত করেছিলেন। আওয়ামী লীগের মিত্র বামপন্থি উদার ভাবধারার সংগঠনসমূহ এ অংশটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে আসছিল যে দিন সংযোজন হয় প্রায় তখন থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ ধারাটি বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। বরং তারা (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, (২০১১ সালের ১৪নং আইন)-এর ২ ধারা বলে, সংবিধানের ঐ অংশটিতে নিম্নোক্ত পরিবর্তন আনয়ন করে; ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। ’
মূল বিষয় অবিকৃত রেখে শুধু সৃষ্টিকর্তা যুক্ত করলেই কি বিষয়টি ধর্ম নিরপেক্ষতার মাপকাঠিতে উতরে যাবে। ফলে বিএনপি উল্লিখিত বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করে যদি সাম্প্রদায়িক হয়, আওয়ামী লীগ এটা সামান্য পরিবর্তিত আকারে পুনঃপ্রবর্তন করে কি অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গণ্য হতে পারে? আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে বিয়োজন না করে নতুনভাবে প্রবর্তন করে যদি অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার দাবি করে, বিএনপিকে কোন যুক্তিতে এ বিষয়ে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার দল বলা যাবে?
ফলে সংবিধান সংশোধনের উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায়, সাম্প্রদায়িক/অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ/ধর্মভিত্তিক চরিত্র নির্ণয়ে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। সাম্প্রদায়িক বলা হলে তিনটি দলই তাই। আবার ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করলে তিনটি দলকেই করা যৌক্তিক।
এ দলগুলোর মিত্র শক্তি হিসেবে দল/ব্যক্তি বিশেষের রাজনীতি কোনদিকে ঝুঁকে আছে সে বিবেচনায় আওয়ামী লীগ উদারপন্থি বা অসাম্প্রদায়িক বলা হলেও প্রয়োজনবোধে নির্বাচনে/আন্দোলনে তারা রক্ষণশীলদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেন, এটাও ঐতিহাসিক সত্য।
বিএনপির জন্ম আওয়ামী লীগের অনেক পরে। যে প্রেক্ষিতে বিএনপি রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করল, তাতে করে তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী জনগোষ্ঠী ও সংগঠনসমূহের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হয়ে উঠল। বিএনপি এককথায়, আওয়ামী লীগ ও তদীয় মিত্রদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হলো। স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী ডানপন্থি রক্ষণশীল ও ধর্মভিত্তিক দলসমূহ বিএনপির মিত্রশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। তবে বামপন্থি বা উদার রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দও বিএনপির সঙ্গে সখ্য বা জোট গঠন করেছে, আন্দোলন ও নির্বাচন একসঙ্গে করেছে, এ উদাহরণও বিদ্যমান।
জাতীয় পার্টির জন্ম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, বিএনপির বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে। সে সময় নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে বিএনপির অবস্থান ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। সে কারণে, রাজনীতিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির লক্ষ্য ছিল সে শূন্যতা পূরণ করা। ফলে সম্পূর্ণ বিএনপির আদলে, মোটামুটি বিএনপির নেতাকর্মী সমন্বয়ে জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছিল। শুধু নতুন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পরিবর্তিত নাম ছাড়া জাতীয় পার্টি ও বিএনপি প্রায় ক্ষেত্রে সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এককথায় বলতে গেলে সে সময় জাতীয় পার্টি গঠনের প্রক্রিয়াটি ছিল নতুন বোতলে পুরনো মদ ঢালার ন্যায়। নতুন বোতল জাতীয় পার্টি আর পুরনো মদ বিএনপির সিংহ অংশ। একই সঙ্গে বিএনপির সমর্থক ও ধর্মভিত্তিক মিত্র দলগুলোর কমবেশি জাতীয় পার্টির সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। তবে জাতীয় পার্টির শাসনামলে অনেক কাজকর্মে ধর্ম নিরপেক্ষতার ছাপ লক্ষ করা যায়। নেতাদের মধ্যে অনেকেই বাম রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
উপরের আলোচনা থেকে দুটি জিনিস স্পষ্ট হয়। প্রথমটি হলো- বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থানকারী রাজনৈতিক দলসমূহের মতাদর্শ এক ধরনের। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো— এসব দল একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক। এ দেশের সিংহভাগ জনগণের ন্যায় রাজনৈতিক দলগুলোও ধর্মের প্রতি দুর্বল সে অর্থে সাম্প্রদায়িক। কিন্তু ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার পক্ষে অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ। এক কথায় সব কয়টি শীর্ষ রাজনৈতিক দলই মধ্যপন্থি।
জনসমর্থনের মাপকাঠি বিবেচনায়, নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গঠিত জোটের নেতৃত্ব উল্লিখিত মধ্যপন্থি শীর্ষ দলসমূহের যে কোনো একটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সে কারণে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য যে কোনো জোটে যোগ দেওয়া ও সে জোটের পক্ষে তাকে গ্রহণ করা কোনোটাই কোনো ধরনের আদর্শগত সংঘাত সৃষ্টি করে না। তবে উল্লেখ্য যে, দেখা যায় বামপন্থি বা ডানপন্থিরা নিজ নিজ প্রকারের আধিক্য যে জোটে দেখে সেখানেই যোগ দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
নির্বাচনের ক্ষেত্রে, আদর্শগত অবস্থানকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। সাংগঠনিক শক্তি, সমর্থক গোষ্ঠীর আকার ইত্যাদি বিবেচনা করে, দর কষাকষির মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা সৃষ্টি হলে যে কোনো দলকে যে কোনো রাজনৈতিক জোটের প্রতি সমর্থন বা যোগ দিতে দেখা যায়। আবার জোটের পক্ষ থেকে তাদের সাদরে গ্রহণও করা হয়।
অতিসম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডানপন্থি ধর্মভিত্তিক সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম’ এর আন্তরিক বৈঠক, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা ও দাবিসমূহের ওপর ইতিবাচক মনোভাব বর্ণিত অবস্থার আলোকে অযৌক্তিক বলা যায় না। বরং মিত্র বা প্রতিপক্ষ দলসমূহ এ বিষয়ে যে যাই বলুক প্রধানমন্ত্রীর নিজ দলীয় অবস্থান থেকে বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় এ কাজটিকে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলা যায়।
লেখক : সাবেক মন্ত্রী ও কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি।