অভিমত: জিএম কাদের
প্রিন্ট সংস্করণ, প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০১৭, ০২:০৮:২৬ । সমকাল |
জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনে করেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ গঠন সম্ভব। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকেও ওই সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। এতে সংবিধানের ব্যত্যয় হবে না, বরং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে নিজের ভাবনায় এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচন ‘বর্জন’ করেন। নির্বাচন থেকে দূরে ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী জিএম কাদেরও। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একাংশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৪ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শেষ মুহূর্তেও যখন বিএনপি এলো না, তখন আমাদের চেয়ারম্যান নির্বাচন বন্ধ করার দাবি করেন।’ সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের আশাবাদী, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোটের মধ্যে নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জাপা কোনদিকে যাবে, তা এখনই খোলসা করতে চান না এই নেতা।
২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দেন। মন্ত্রিসভায় বিএনপি থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে বিএনপি এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় থাকে। জাপা থেকে ছয় মন্ত্রী নিয়ে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর ৩০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাপার তিনজন, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেপির একজন করে সদস্য রয়েছেন। জিএম কাদের বলেন, ‘বর্তমান মন্ত্রিসভায় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচটি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। বিদ্যমান মন্ত্রিসভার আকার কিছুটা কমিয়ে বিএনপি থেকে কয়েকজনকে যুক্ত করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব। সংবিধান মেনেই সেটা করা সম্ভব।’
জিএম কাদের আশাবাদী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতায় আগামীতেও একটা সমঝোতা প্রস্তাব দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে যতটা জানি তাতে আমার ধারণা, আগামীবার তিনি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করবেন না। তিনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান।’ জিএম কাদের মনে করেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা খুবই যুক্তিসঙ্গত। আগামী নির্বাচনেও প্রাসঙ্গিক।
দশম সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব নেই- দলটি কীভাবে মন্ত্রিসভায় শরিক হতে পারে- এ প্রশ্নের উত্তরে জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার যদি ৬০ সদস্যের হয়, সেখানে ছয় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী আসতে পারবেন। বিএনপি প্রতিনিধিদের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী করে মন্ত্রিসভায় আনা সম্ভব।’ সরকারের আকার যদি ছোট হয়, সে ক্ষেত্রেও সমাধান রয়েছে বলে মনে করেন বিগত মহাজোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিএনপির প্রতিনিধিদের মন্ত্রী মর্যাদায় উপদেষ্টা করতে পারেন। তারা যাতে মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্য একটি আদেশই যথেষ্ট।’
নির্বাচনকালীন সরকারে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না- বিএনপির এ দাবি সমর্থন করেন না জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা শেখ হাসিনার প্রতি রয়েছে। তাই তাকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলা যায় না।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হলে বিএনপি সেখানে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে- এ প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করতে হবে, বিএনপি বা অন্যান্য দল থেকে যেসব মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে আসবেন, তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হবে না। আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে আসা মন্ত্রীরা নির্বাচনের সময় যাতে স্বাধীনভাবে মন্ত্রণালয় চালাতে পারেন, সেজন্য তার পছন্দের টিম (সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা) দিতে হবে।’
জিএম কাদের বলেন, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, তথ্য, শিক্ষা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয়গুলো ভাগাভাগি হতে পারে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপি কিংবা জাপাকে ছেড়ে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদায়নে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত নেওয়া উচিত।