জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোটভাই। দেশের চলমান রাজনীতি এবং জাপার বর্তমান রাজনীতি নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন তিনি। গত শুক্রবার দুপুরে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা হয়।জিএম কাদের বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের জায়গায় একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারী শাসন চালু হয়েছে। দেশের পার্লামেন্ট সরকারি কর্মকা-কে বৈধতা দেওয়ার একটা প্রসেস ছাড়া আর কিছু নয়। এখানে বিরোধী দলের মতামতের কোনো মূল্য নেই। দেশে সুশাসনের অভাব আছে। এটি দিন দিন বাড়ছে।জোটের রাজনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটের রাজনীতি থেকে কেউই বেরিয়ে আসতে পারবে না। সামনের পরিস্থিতি কী হয় এর ওপরই এটি নির্ভর করছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই যখন জোটের মধ্যে যায় আমাদের কোনো না কোনো জোটে যেতেই হয় বা হবে। এটিই এখন বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ। যদি নির্বাচন সিস্টেম না পরিবর্তন করি, প্রভিন্সিয়াল ভোটিং সিস্টেম বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন না করা হয় তা হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত টিকবে না। যেখানে সবাই, যারা এক শতাংশ ভোট পায় তারাও এক শতাংশ সিট পার্লামেন্টে পাবে। সাধারণভাবে যে কোনো নির্বাচনী এলাকায় যদি ৩০-৪০ শতাংশ ভোট না থাকে তা হলে পার্টি যতই শক্তিশালী হোক জিততে পারবে না। এ জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি থেকেদূরে সরে যাচ্ছে।

প্রভিন্সিয়াল ভোটিং সিস্টেমে যাচ্ছে। যদি আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা করতে চাই তা হলে বর্তমান ভোটিং সিস্টেম থেকে সরে আসতে হবে।জাতীয় পার্টি আগামীতেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থেকেই নির্বাচন করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি এখনই আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে সব দলই ঠিক করবে কোথায় কার সঙ্গে নির্বাচন করলে ভালো হবে। আর আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করেছি কারণ, বাংলাদেশ শুধু নয় সারা পৃথিবীতে দুটি ধারার রাজনীতি চলে। একটিকে বলা হয় রক্ষণশীল বা রাইটিস্ট আর আরেকটাকে বলা হয় উদারপন্থি বা লেফটিস্ট। দুটি ধারাতেই সব ভাগ হয়। আমাদের দেশে ৩টি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মধ্যমপন্থি দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিশেষত্ব হলো মধ্যমপন্থি দল হলেও সব সময় বামপন্থি নিয়ে জোট করে বা তাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। মধ্যমপন্থিদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না এবং যারা লেফটিস্টদের পছন্দ করে না, তাদের নিয়েই বিএনপি হয়েছে। পরবর্তী সময় যখন তাদের নেতা (জিয়াউর রহমান) মারা গেলেন, যখন দলের দুর্দিন তখন এরশাদ সাহেবের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি গঠিত হয়েছে। তখন তাদের (বিএনপি) বেশিরভাগ নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করেছেন। সুতরাং জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি আদর্শগতভাবে একই। মধ্যমপন্থি কিন্তু রক্ষণশীল প্রকৃতির। আর আওয়ামী লীগ হলো মধ্যমপন্থি; কিন্তু উদারপন্থিদের নিয়ে সখ্য।‘জাপা পরগাছা হয়ে থাকবে না’ ভিন্ন একটি প্রোগ্রামে এ মন্তব্য করেছেন জিএম কাদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেককে বলতে শোনা যায়, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম। সেটি ঠিক তথ্য নয়। আমাদের প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই মানুষ সঙ্গে নিতে চায়। আমাদের যে শিকড় আছে, আমরা যে পরগাছা নই- এটি আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রমাণ করে গেছেন। উনি ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। তিনি এর পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় বৈরী অবস্থা থাকা সত্ত্বেও ৫টি আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে তা প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দলের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রথম বিকল্প দল হচ্ছে বিএনপি। দ্বিতীয় বিকল্প হলো জাতীয় পার্টি। আমরা প্রথম বিকল্প হতে চাই। সরকার যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, আমরা বিএনপির জায়গায় প্রথম বিকল্প হব। এর পর আমরা সরকারে যাব, এটিই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

জাতীয় পার্টির যারা নেতৃত্বে আছেন তারা কখনই পার্টিকে পরগাছা হতে দেবেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে, আমরা সেই ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করব। এ জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত। এতে ঝুঁকি থাকতে পারে। জেল-জুলুমের ভয় থাকতে পারে।সরকারসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার কারণেই কি এ শঙ্কা? কোনো চাপ আসছে কিনা কোনো মহল থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরাসরি কোনো চাপ আসেনি। আমরা এখনো যেটি করছি সেটি হলো জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরছি। সরকারের হয়তো এখনো ওই ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়নি যে, সরকারের বিরাট কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি সত্যের একটা নিজস্ব শক্তি আছে। এখনকার অবস্থা থেকে মানুষ পরিত্রাণ চায়। আমরা মনে করি কোনো এক সময় গিয়ে সরকার বা আমাদের বিপক্ষ শক্তি আমাদের বাধাদানের চেষ্টা করতে পারে।