খালেদা জিয়ার সাজা-পরবর্তী রাজনীতি :সাক্ষাৎকার ১

সমকাল । ১৬.০২.২০১৮

দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডে আপাতদৃষ্টিতে বিএনপি চাপে রয়েছে। তবে একই রকম চাপে রয়েছে আওয়ামী লীগও। খালেদা জিয়ার সাজার পরও বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়নি। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আন্দোলনে নয়, নির্বাচনে আগ্রহী। দলটির সাংগঠনিক অবস্থা যেমনই হোক, ভোটের রাজনীতিতে তারা বৃহৎ শক্তি। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে এ বড় শক্তিকে মোকাবেলার চাপ নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার রায়-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এমনই মূল্যায়ন জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। সমকালের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অস্বচ্ছ ও অনিশ্চিত। খালেদা জিয়ার সাজার পরও উত্তাপ নেই রাজপথে; এ নীরবতা ঝড়ের পূর্বাভাস। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ঝড়ের গতি তত বাড়বে।

আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদেরের অভিমত, সম্ভাব্য পাঁচটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে নির্বাচনে। এগুলো হলো- একতরফা নির্বাচন, সব দল অংশ নিলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচন ভণ্ডুলের শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত কী ঘটে তা দেখতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তবে খালেদা জিয়ার মামলা ও রায় নিয়ে কথা বলতে রাজি নন সংসদে বিরোধী দল জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুজ জিএম কাদের। জাপার অন্য নেতাদের মতো তারও বক্তব্য, আদালতের রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। রায়-পরবর্তী রাজনীতি সম্পর্কে তার বিশ্নেষণ- খালেদা জিয়ার সাজায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে। দুই দলের মধ্যে সমঝোতার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণ কারও হাতেই নেই।

জিএম কাদের মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও খালেদা জিয়ার রায়-পরবর্তী কর্মসূচিতে স্পষ্ট বিএনপি ভোটে অংশ নেবে। কারণ, আন্দোলন করে সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তিন মাস হরতাল-অবরোধ করেও কিছু করতে পারেনি। তাদের সামনে এখন নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপি এ চাপ কীভাবে মোকাবেলা করবে, তা বলার সময় এখনও আসেনি।

জিএম কাদেরের অভিমত, সরকারও চাপে রয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ টানা নয় বছর ক্ষমতায় থাকায় সরকারের জনপ্রিয়তায় স্বাভাবিকভাবেই ভাটার টান। জনমত সরকারবিরোধী; তা স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলগুলোর দিকে। বিএনপি যদি ঐক্য ধরে রেখে মাথা নত না করে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারে, তাহলে জনমত তাদের দিকে চলে যেতে পারে। এতে আওয়ামী লীগ চাপে পড়বে। এ চাপ তারা কীভাবে মোকাবেলা করবে তা বলার সময় এখনও হয়নি। বিএনপির মূল লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়। এ দাবিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীনরা টিকে থাকতে চাইলে সংঘাত অনিবার্য। রাজনীতিতে ‘ফ্যাক্টর’ শক্তিগুলো যার দিকে থাকবে, ‘সংঘাতে’ তার জয় হবে।

‘নির্বাচনী ঝড়ে’ জাপার ভূমিকা কী হবে জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র এরশাদ দিতে পারেন। তিনি যে দিকে ভালো মনে করেন, জাপা সেদিকেই যাবে। রাজনৈতিক দল সফল না ব্যর্থ, দিন শেষে তা নির্ধারিত হয় ভোট ও আসনের সংখ্যায়। যেভাবে নির্বাচন করলে ভোট ও আসন বাড়বে সেদিকেই যাবে জাপা।